ঢাকা , বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫ , ২৬ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
অপরাজেয় বায়ার্নকে রুখে দিলো ইন্টার মিলান আর্সেনালকে আনচেলত্তির হুমকি রিয়ালের সাথে জয় পেলো আর্সেনাল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের সাথে বড়ো জয় পেলো বাঘিনীরা আইপিএল বাদ দিয়ে পিএসএল দেখবেন দর্শকরা-হাসান আলি পারিশ্রমিক বকেয়া ইস্যুেত অনুশীলন বয়কট করলো পারটেক্সের ক্রিকেটারা পাকিস্তানে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেলেন লিটন ও রিশাদ টাইগারদের নতুন ফিল্ডিং কোচ হিসেবে নিয়োগ পেলেন জেমস প্যামেন্ট নাসার সঙ্গে আর্টেমিস চুক্তি স্বাক্ষর বেড়েছে আদানির বকেয়া পরিশোধ ও বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে ৫৫ বিনিয়োগকারী ৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা পেছাতে পিএসসিতে পরীক্ষার্থীদের অবস্থান এসএসসির পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়ালে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বাংলাদেশে আরও এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এনডিবি প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে পাইলট প্রকল্প চালু করবে ইসি ক্রয়াদেশ স্থগিত করছেন মার্কিন ক্রেতারা নকল ঠেকাতে কঠোর নির্দেশনা মাউশির আবারও ফেসবুক লাইভে এলেন শেখ হাসিনা হাসিনাকে নিয়ে মোদির সঙ্গে চূড়ান্ত কথা হয়নি-পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হাসিনাকে নিয়ে মোদির সঙ্গে চূড়ান্ত কথা হয়নি-পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ধানমন্ডির বাসায় ডাকাতি

কিলিং মিশনে ৪ মিনিটে হত্যা করে প্রবাসী চিকিৎসককে

  • আপলোড সময় : ১৮-১১-২০২৪ ১২:২০:৪১ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৮-১১-২০২৪ ১২:২০:৪১ পূর্বাহ্ন
কিলিং মিশনে ৪ মিনিটে হত্যা করে প্রবাসী চিকিৎসককে
রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাড়িতে প্রবাসী চিকিৎসক একেএম আব্দুর রশিদ (৮৫) হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় চার জন। এর মধ্যে তিন জন বাড়ির বারান্দা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। আরেকজন বাইরে রিকশা নিয়ে পাহারা দেয়। কিলিং মিশনে তারা সময় নেয় মাত্র চার মিনিট।
গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে ধানমন্ডি-১৫ (২৯৪/১) নিজ বাড়িতে স্ত্রীর সামনে হত্যা করা হয় চিকিৎসক আব্দুর রশিদকে। পাঁচতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় তারা স্বামী-স্ত্রী থাকতেন। তাদের দুই ছেলে-মেয়ে থাকেন লন্ডনে। তারাও যুক্তরাজ্য প্রবাসী। মূলত শীতের সময়টায় তারা দেশে থাকতেন আর বাকি সময় ছেলে-মেয়ের সঙ্গে লন্ডনে। গত সেপ্টেম্বর মাসে তারা ঢাকা আসেন। আগামী বছরের জানুয়ারিতে আবার লন্ডন চলে যাওয়া কথা ছিল।
প্রবাসী চিকিৎসক একেএম আব্দুর রশিদ হত্যার ঘটনায় গত শুক্রবার তার চাচাতো ভাই মো. রেজাউল করিম বাদী হয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি থানা পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, গোয়েন্দা তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ছায়াতদন্ত করছে।
জানা যায়, তিন ব্যক্তি বারান্দা দিয়ে আব্দুর রশিদের ঘরে প্রবেশ করে। একজন তার স্ত্রী সুফিয়া রশিদের মুখ চেপে ধরে রাখে। বাকি দুই জন আব্দুর রশিদকে ধরে নিচে শুইয়ে বুকে ও গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যা করে। হামলাকারীদের বয়স ২২ থেকে ২৮ বছর। হত্যার সময় ভুক্তভোগীর বাড়ি থেকে তারা কিছুই নেয়নি। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন, তাহলে কেন প্রবাসী চিকিৎসক আব্দুর রশিদকে হত্যা করা হলো, কারা এই হত্যাকারী?
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা কয়েকটি মোটিভ সামনে রেখে ছায়াতদন্ত করছেন। সম্পত্তির লোভ, আত্মীয়-স্বজন ও ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে হত্যা করা হতে পারে আব্দুর রশিদকে। সিসিটিভি ফুটেজ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আব্দুর রশিদ ও তার স্ত্রী সুফিয়া রশিদ কিছুটা রাগী প্রকৃতির ছিলেন। বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের ধানমন্ডির পাঁচতলা ভবনে ব্যাচেলরদের ভাড়া দিয়েছেন। প্রায় সময় তারা ব্যাচেলরদের বকাঝকা করতেন। সিসিটিভি ক্যামেরায় যে তিন জনকে দেখা গেছে, এর মধ্যে দুই জনকে চিনতে পেরেছেন ওই বাড়ির বর্তমান ও সাবেক দুই জন ভাড়াটিয়া (ব্যাচেলর)। তারা বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ খুব একটা স্পষ্ট না। তবে তারা আগে এই বাড়িতে ভাড়া ছিলেন। তারা কেন হত্যা করবে, এমন প্রশ্নে ওই দুই ব্যাচেলর বলেন, হয়তো তাদের সঙ্গে বাড়ির মালিক দুর্ব্যবহার করেছিলেন।
গত শনিবার দুপুরে ধানমন্ডির ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচতলা বাড়ির দোতলায় রাস্তার পাশের একটি ইউনিটে থাকতেন নিহত প্রবাসী চিকিৎসক আব্দুর রশিদ ও তার স্ত্রী সুফিয়া রশিদ। বাড়ির বারান্দার অংশ খোলামেলা। বারান্দার দরজা খোলা থাকলে যে কেউ দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন। বাড়ির অন্য ইউনিটগুলো ব্যাচেলরদের ভাড়া দেয়া। দোতলার একটি ইউনিটে কথা হয় কয়েকজন ব্যাচেলরের সঙ্গে। তারা প্রত্যেকেই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে তানভীন হোসেন বলেন, সেদিন রাত আড়াইটার দিকে শোরগোল শুনতে পাই। মাঝে মধ্যে বাড়িওয়ালি চিৎকার করতেন। তাই আমরা খুব একটা গুরুত্ব দেইনি। পরে তিনতলা থেকে বাঁধন নামে এক শিক্ষার্থী এসে বলেন, বাড়িওয়ালাকে কারা যেন মেরেছে। দ্রুত আমরা বেরিয়ে গিয়ে দেখি আংকেল (আব্দুর রশিদ) রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। আন্টি তার মাথায় পানি ঢালছেন। পরে আমরা দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জহিরুল নামে পাশের বাড়ির এক সিকিউরিটি গার্ড বলেন, ওই বাড়ির বাড়িওয়ালা ও বাড়িওয়ালি প্রায় সময় অনেক রাগ দেখাতেন। কিছু দিন আগে আমাদের বাড়ির একটি সিসিটিভি ক্যামেরা ও লাইট ভেঙে ফেলেছেন তারা। কেননা সেটা তাদের বাড়ির একাংশ কাভার করতো। যদি ওই ক্যামেরা থাকতো, কারা বাড়িওয়ালাকে হত্যা করেছে সেটা আরও স্পষ্ট দেখা যেতো।
ডা. আব্দুর রশিদ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাজারীবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, ধারণা করা হচ্ছে প্রবাসী চিকিৎসক আব্দুর রশিদকে ছুরি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে আমরা কাজ করছি। আশা করছি খুব দ্রুত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো।
হত্যার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা এখনই বলার সুযোগ নেই। হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে পারলে সব বেরিয়ে আসবে।
জানা যায়, আব্দুর রশিদের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ঝালকুড়ি পশ্চিমপাড়া গ্রামে। তার বাবা মৃত সামসুদ্দিন মিয়া। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তার বড় ভাই মারা গেছেন। আব্দুর রশিদ চাকরি জীবনের সিংহভাগ সময়ই কাটিয়েছেন লন্ডন ও দুবাইয়ে। তার দুই সন্তান লন্ডন প্রবাসী। সেখানেই চাকরি করছেন। তার স্ত্রী সুফিয়া রশিদও চিকিৎসক। তিনিও চাকরি করেছেন দেশের বাইরে। চিকিৎসক আব্দুর রশিদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আশপাশের একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে ধানমন্ডির-১৫ নম্বরে প্রধান সড়ক (সাত মসজিদ রোড) থেকে চার ব্যক্তি ডায়মন্ড হোটেলের গলি দিয়ে প্রবেশ করে। এর মধ্যে একজন রিকশাচালক, যার পরনে ছিল লুঙ্গি ও কালো শার্ট। বাকি তিন জন হেঁটে যান। এর মধ্যে একজনের গায়ে ছিল কালো শার্ট, আরেকজনের গায়ে নীল রঙের জার্সি ও অন্যজনের শরীরে ছাই রঙের শার্ট ও চাদর। তাদের তিন জনের বয়সই ২০ থেকে ২৮ বছর। রাত ২টা ৩২ মিনিটে বাড়ির বারান্দা দিয়ে আব্দুর রশিদের ঘরে প্রবেশ করে তিন জন। মাত্র চার মিনিটে ছুরি দিয়ে আব্দুর রশিদকে হত্যা করে ২টা ৩৬ মিনিতে বেরিয়ে যায় তারা। পরে স্টাফ কোয়ার্টারের দিকে চলে যায়।
হাজারীবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, নিজ বাড়িতে প্রবাসী চিকিৎসক আব্দুর রশিদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। হত্যাকারীদের গ্রেফতারে আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে। আশা করি দ্রুত ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা যাবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স